তোমার দিকে যাচ্ছি

তোমার দিকে যাচ্ছি

১.

আমি হয়তো তোমার দিকেই যাচ্ছি

তুমি আছো অন্য কোন লোকে

তোমার দিকে ছোটাই এখন মোক্ষ

তুমি কেন দুয়ার রাখো বন্ধ?

বন্ধ দুয়ারে সিঁদ কেটে যাই আমি

চোর ভাবছো? প্রেমিক কেন নয়?

প্রেমিক বলে ভুল মানুষের ছায়ায়

সাজাও তুমি ভিন্ন লোকালয়।

আমি হয়তো তোমার দিকেই যাচ্ছি

তোমার বুঝি ভ্রু বাঁকানো দৃষ্টি

একটা চড়াই উড়ালে ডাক দিলো

ঘরছাড়া এক শূণ্য দুপুরে ঠাঁই…

২.

অথচ এক চির নদীর বাঁকে

বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি করে তাড়া

ছুটছি শুধুই, ছুঁতে যে চাই কাকে

মন জানে না, মনের গহীন পাড়া।

শরীর সেতো শরীর পানে ধায়

মন চলে হায়, উদগীরনের মতো

মুখ দেখে তার এমন কান্না পায়

রাশপ্রিন্ট হয়ে ঝরে লিখছি যতো।

আমার না হয় আবেগ থরো থরো

তুমি তো এক চির নবীন মুখ

বিস্মরণের দেয়ালে জমা করো

বৃষ্টি নামের অনন্য এক অসুখ!

৩.

তোমার শীতল চোখ, উড়ছিলো—বৃষ্টিমগ্ন দিনে

আমি উন্মাদ, দাঁড়িয়ে, বিহ্বলতা ছুঁয়ে আছে আজ

ভাবছি এই ঐশ্বর্য তুমি কোথা থেকে পেতে পারো

যখন উড়ছে সব মেঘমেদুর সন্ধ্যা আকাশে

তুমি হয়তো আলস্যে, চুল বাঁধো মৃদু মৃদু ঢঙে

পড়শি মেঘের সারি উড়ে মৃদুরূপ ভালোবেসে

আমি থাকি অস্তাচলে, দূরবর্তী মেঘের আড়ালে

অলক্ষ্যের হাতছানি হয়ে— বিরল পাখির গানে।

প্রেম— পুড়ে ও পোড়ায়— এই দৃশ্যে সমগ্র পৃথিবী–

দাঁড়িয়ে, সমস্ত শব্দ ভেঙে পড়ে আয়নার মতো!

৪.

কেবা না জানে, ব্যকুল হয়ে বারে ডেকে যাও যারে

সে -ও দূরবর্তী হয়, আকাঙ্ক্ষার বহুল ব্যবহারে

অথচ প্রেমের রূপ— না দেখারে পারে না এড়াতে

ক্রমশ গভীর হয়, বিন্দু বিন্দু ঘামের সম্পাতে

ঘাসের শরীর এক, নুয়ে পড়ে আঁধারের দিনে

সে ব্যথার রূপ–ছড়িয়েছে পৃথিবীর কোণে কোণে…                     

৫.

রাতটুকু পার করি ঠিকঠাক ঘুমের আদরে

যেখানে তোমাকে পাই, স্বপ্নে ও কুসুমের ওপারে

যেন ছুঁয়ে থাকি, সেই স্পর্শ টের পাই ঘুম ভেঙে

আর থাকে হাহাকার—যাকে পাইনি তার সন্ধানে

তুমি ; চির হাওয়ায় মিশে মিশে হয়ে যাও লীন

আমার শরীরে প্রিয়—যেন আকার-আকৃতিহীন

পানপাত্রে সেইসব উর্দ্ধমুখী রক্তের আকরে—

তাকে না পাওয়া বেজে ওঠে প্রলাপে, ভীষণ জ্বরে

এরকম ঘেমে ওঠা বর্ষায়, মৃদু আলোতে ডুবে—

রাত আসে—রতিমগ্ন জীবনের উষ্ণ আবির্ভাবে

শুধুই কামনা নয়, আরো রূপ—আরো ভালোবেসে—

শরীর ছেড়ে বিহঙ্গে—এই বিষাদের প্রতিবেশে

অথচ তোমার দিকে যাই—আসে বিপন্ন হাওয়া

শ্রেণি বিচ্ছেদের মতো—পুড়ে পুড়ে ফুরিয়ে যাওয়া

এ’ভবিতব্য জেনেও, যেভাবে আগুনে ঝাঁপ দেয়—

বোকা পতঙ্গের দল; এ’জীবনের দাবি জানায়

আমি যেন তাদেরই দলে, ভুল করে দাঁড়িয়েছি

বহুযুগ পার করে, মৃত পাখিটির কাছাকাছি

এইসব নামহীন প্রেমিকের মতো একরোখা

যে জ্বলে, নিয়তি মেনে—বয়ে যায় আগুনের শিখা

কোথায় গোপন রবে, সমরূপ আলোর অভাবে

কে তবে দূরত্বে যাবে, আলো ও আঁধারের সদ্ভাবে

প্রেমে—এক প্রেমিকার ঠোঁটপোড়া মোমগলা তাপে

মৃদু মরণের কাছে—রাতটুকু পোড়াতে—উত্তাপে?

৬.

তোমাকে দেখার মতো চোখ নেই আমার,

তোমাকে রাখার মতো কোন হৃদয়

তবু দ্যাখি, তবু চাই

যেন এক অগস্ত্য যাত্রায়

পাশাপাশি উদভ্রান্ত আঙুলের মতো

কে কাকে ছোঁয়, জানে না অভিন্ন হাতও

তোমাকে ছোঁয়ার মতো এমন আঙুল

কোথায় পাই!

কেন চেয়ে আছি–দূর কোন যাত্রায়

যেখানে তুমি নেই—

কেবল হৃদয় ভাঙার মতো শব্দ আছে…

৭.

তোমার কাছে থাকতে চেয়েছি যত

শঙ্কা এসে থমকে দাঁড়িয়েছে

তোমার কাছে ফেরা হবার নয়তো

তুমি যখন অন্য কারোর কাছে

মন মানে না, মন চলে যায় দূরে

যেখানে নেই নিয়ম মানার তাড়া

এককুশি জল চাইতে যেমন পারে

নেই যেখানে হাজারো পাহারা

জানি এমন ফেরার নেইতো ঘর

অন্ধচোখে আঁধার নামে গাঢ়

ফিরছি তবু, ফেরার অনুস্বর

তীব্র হয়ে বাজে বুকে আরো…

৮.

যেনবা গভীর ঘুমে দূরলগ্ন গান বেজে ওঠে

সর্বস্ব বন্ধক দিয়ে বসেছি উজ্জয়িনীর পাড়ে

কে যেন হারিয়ে যায়, তার স্মৃতি তবু প্রতিপাঠে—

মনে পড়ে, ঈশ্বরের কল্পনার মতো এ’শহরে।

কেন জেগে উঠলাম? বেদনার গভীর সহগে

তাকে কেন আগুনের মতো পুড়ে পুড়ে চাইলাম

এ’প্রশ্নের তীর ছুটে আসে শূন্যে— তীব্র বেগে

হাওয়ায় হাওয়ায় বাজে সেই বেদনার নাম।

যদিও সকল প্রেম মাটি থেকে উচ্চারিত হয়

সকলেই ছুটে আসে এই রিক্ত বাষ্পময় দিনে

বুকের ভেতর হয় প্রকাশিত— গভীর প্রণয়

তুমি যেন গান হও— ঝরো, ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনে।

সৈয়দ সাখাওয়াৎ
Written by
সৈয়দ সাখাওয়াৎ
Join the discussion

সৈয়দ সাখাওয়াৎ
সৈয়দ সাখাওয়াৎ

সৈয়দ সাখাওয়াৎ

জন্ম ৮ আগস্ট ১৯৭৮; চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর।