না হয় বিরহে

না হয় বিরহে

সৈয়দ সাখাওয়াৎ

সন্ধ্যে গড়িয়েছে, আলো নিভে আসে দূর পাহাড়ে
আমাদের অশ্রুবিন্দু পাড়ি দ্যায় থির অহঙ্কারে।

তবুও তো কথা থাকে–প্রেম থাকে হৃদয়ে গোপন
নিত্য শরীরের কাছে, কে করে নিষেধ উন্মোচন।

কেন নিষেধের গান, কেন বিরহে ঢাকো তারে
আঙুলের স্পর্শ নেবো কোন অধিকারে?

কথা বলো, মুখ কেন আড়ালে–বোকা অভিমানে
তুমি তো কথার ডালি– জড়া-অস্বস্তি ভাঙা গানে।

২.

আয়নায় মুখ ঢাকো? কথা বলো বিশাদের বালিকা
নীরব চোখের পাতায় পৃথিবী পড়েছে ঢাকা।

ঘুমে ও জাগরণে তৃষ্ণা হয়ে ফিরে ফিরে আসো
চির রাধিকা আমার– বিরহে না হয় ভালোবেসো!

দিন কেটে যায় আঁধারে, চির বিরহের তীরে
তুমি তো অলক্ষ্যের প্রেম, মনে পড়ছে বারে বারে।

তোমাকে লিখছি তাই, স্মৃতি শুধু একটি বিকেল
আলোকে পুড়েছি খুঁজে হারিয়ে যাওয়া মার্বেল।

৩.

হারিয়েছি কতকিছু, তোমাকেও মনে পড়ার ছলে
জেনেছি পাবো না হায়, একে কী বিরহ বলে?

বিরহ দহনে শুধু, কেটে যাবে আধেক জীবন
মৃত্যু ছোঁবে না প্রেম, ছোঁবে না বিরহ অনল।

আবার তো একই দিন ফিরে আসবে তোমার নামে
মিলনে যাপন নেই–বেঁচে আছো বিরহীর প্রেমে…

আজ পূর্ণিমা, আজ এলোকেশী রাত
তুমি ঝরো নক্ষত্রে, যদি দেখা হয় দৈবাৎ।

৪.

চাঁদ উঠেছে, ইট- পাথরের ফাঁকে দ্যায় উঁকি
কে তবে উন্মাদ হয়, বুকে নিয়ে অবাক জোনাকি।

মেঘ তবু ঢেকে রাখে, আলো-আঁধারির মাঝে চাঁদ
চেয়ে থাকি নৈ, যদি ডাকে কেউ অকস্মাৎ।

ডাকেনি এখনো কেউ–বুকে যেন অজস্র ঢেউ
তির তির কাঁপে শুধু, একা হই এই জনসমুদ্রেও।

একা, তবু জেনো ভালোবাসা এক স্রোতস্বিনী
সুগন্ধি শরীরে তবু মুছিনি যাবতীয় গ্লানি।

৫.

প্রতি জোয়ারে জল মেখে করি শূন্যতার চাষ
কবিতা তো মিথ্যে নয়, চির বিরহের সন্ন্যাস…

জীবন খুঁজেছি অনেক, তোমাকে খুঁজেছি যেমন
নিয়ত পোড়াও তুমি না পাওয়ার মৃদু আলোড়ন।

স্পর্শ অনাথ করে, শূন্য করে বুকের অঞ্চল
যতদূর দৃষ্টি যায়, শেষ স্পর্শই শুধু সম্বল।

ঝড়ো বাতাসে কত সন্ধ্যে কেটেছে হায়–
একা পথটুকু হেঁটেছি–সঙ্গী হয়েছে নির্জনতাই।

৬.

আসলে স্মৃতিই বাঁচে, না হয় মরে যেতাম কত আগে
মগ্ন রয়েছি তাতেই, সাথে নিয়ে বিরহ যন্ত্রণাকে।

বেঁধেছো এমন সুরের মায়া–
দূর নক্ষত্র রাতেও কেঁপে ওঠে তোমার ছায়া।

অথচ সুরে নয় শুধু, ছেয়েছি আরও গাঢ় হও তুমি
যে শব্দে ভাষাহীন হয়ে পড়ি, সে তোমার মনোভূমি।

আমার সাবধানী হাত, ক্রমশ লীন হয় কেবলই
ব্যাকুল কণ্ঠস্বর তুমিও কি শুনতে পাওনি?

না বলা ভাষায় যে ছবি দীর্ঘ হয়ে ওঠে ইজেলে
তারাদের প্রতিভাসে সে ছবি এখনো পাখা মেলে।

অজস্র নদী–দূরলগ্ন সময়ের ক্ষয়
বিরহে মরে যাবে কেউ–সে ছবি আমার নয়…

প্রেম নয়, মোহ এক–দূর কোন সময়ের ধ্বনি
আলো কেটে চলে যায়, তুমি তার স্পর্শ পাওনি।

শুধু মায়া, তৃষ্ণার গভীরে জেগে থাকে যেন
যে প্রশ্নে হৃদয় কাঁপে তার উত্তর মেলেনি এখনো।

৮.

তাই ভুলে থাকা, খেয়ালের মালা থেকে ঝরে ফুল
যে চিনেছে হাহাকার, সে কেন এমন ব্যাকুল?

জানে না বানভাসি, জানে না চির বহমান নদী
আমার ঐশ্বর্যে তুমি ভুল করে নেমে আসো যদি।

সেদিন বিহঙ্গে যাবো–কেটে যাবে শীতার্ত সময়
বিরহ নয়–সেদিন ভালোবাসা ফেরাবো নিশ্চয়।

সৈয়দ সাখাওয়াৎ
Written by
সৈয়দ সাখাওয়াৎ
Join the discussion

সৈয়দ সাখাওয়াৎ
সৈয়দ সাখাওয়াৎ

সৈয়দ সাখাওয়াৎ

জন্ম ৮ আগস্ট ১৯৭৮; চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর।